⚖️ বিচার ফাইলে মামলার স্তরগুলি কি কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 months ago
- Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
-
মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পর নিম্নেবর্ণিত স্তরসমূহ অতিক্রম করতে হয়ঃ-
(ক) অভিযোগ গঠন,
(খ) সাক্ষ্য গ্রহণ,
(গ) ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুসারে আসামীকে পরীক্ষা,
(ঘ) সাফাই সাক্ষী,
(ঙ) যুক্তিতর্ক,
(চ) রায়।
(ক) অভিযোগ গঠনঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১ (ক) ধারা অনুসারে অভিযোগ গঠন সংক্রান্তে শুনানী হয়ে থাকে। নালিশী মামলার ক্ষেত্রে নালিশী দরখাস্ত, ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারা অনুসারে বাদীর হলফী জবানবন্দী, ফৌজদারী কার্যবিধির ২০২ ধারায় তদন্ত প্রতিবেদন, ডাক্তারী সনদপত্র, দাখিলকৃত দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্র এবং পুলিশী মামলার (জিআর) ক্ষেত্রে এজাহার, অভিযোগপত্র, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারায় সাক্ষীর জবানবন্দী, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামীর দোষ স্বীকারোক্তি বা ভিকটিম বা সাক্ষীর জবানবন্দী, ডাক্তারী সনদপত্র, জব্দ তালিকা ইত্যাদি পর্যালোচনা করবেন। উভয় পক্ষের বিজ্ঞ কৌশলীদের বক্তব্য শ্রবণ করে এবং উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনা করে যদি ম্যাজিষ্ট্রেট মনে করেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মতো যুক্তিসংগত কারণ বিদ্যমান নেই তাহলে তিনি কারণ উল্লেখ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১ (ক) ধারা অনুসারে আসামীকে অব্যাহতি (discharge) দিবেন। আর যদি অভিযোগ গঠনের মতো যুক্তিসংগত কারণ থাকে তবে প্রত্যেক আসামীর বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি অভিযোগের জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪২ ধারায় অভিযোগ গঠন করবেন এবং আসামীকে পড়ে শুনাবেন ও বুঝিয়ে দিবেন। ফৌজদারী কার্যবিধির ২২১, ২২২, ও ২২৪ ধারা অনুসারে অভিযোগ ফরম পূরণ করতে হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২২১, ২২২, ও ২২৩ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক চার্জের নিম্নেবর্ণিত উপাদানসমূহ থাকতে হবে।
(১) আসামী যে অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছে তার বিবরণ,
(২) কোন আইনের কোন ধারার অপরাধ,
(৩) বর্ণিত অপরাধের স্থান ও সময়,
(৪) যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার নাম,
(৫) যে জিনিষ সম্পর্কে অপরাধ করা হয়েছে উহার নাম,
(৬) যে প্রকারে অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে তার বিবরণ,
(৭) অভিযোগ ইংরেজীতে অথবা আদালতের ভাষায় লিখতে হবে,
(৮) শাস্তি বৃদ্ধির জন্য যদি পূর্বের দন্ডাজ্ঞাকে প্রমাণ করতে হয় তাহলে দন্ডাজ্ঞার বিষয়ে তারিখ ও স্থান উল্লেখ করতে হবে,
(৯) অপরাধজনক বিশ্বাসভংগ অথবা অপরাধমূলক অর্থ আত্মসাতের ক্ষেত্রে যে অর্থ সম্পর্কে অপরাধটি করা হয়েছে তার মোট পরিমাণ এবং প্রথম তারিখ ও শেষ তারিখ উল্লেখ করতে হবে। তবে এ দুই তারিখের ব্যবধান এক বৎসরের অধিককাল হবে না।
উদাহারণঃ
(অ) ক এর বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ সময়ে কোনো বিশেষ স্থান হতে কোনো একটি জিনিষ চুরি করার অভিযোগ করা হয়েছে। কিভাবে চুরি করা হয়েছিল চার্জে তা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
(আ) ক এর বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ সময়ে ও স্থানে খ কে প্রতারণার অভিযোগ করা হয়েছে। ক কিরূপে খ কে প্রতারণা করেছে চার্জে অবশ্যই তা উল্লেখ করতে হবে।
(ই) ক এর বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ সময় ও স্থানে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ক এর সাক্ষ্যের যে অংশ মিথ্যা বলে অভিযোগ করা হয়েছে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
(ঈ) ক এর বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ সময়ে ও স্থানে খ নামক জনৈক সরকারী কর্মচারীকে তার সরকারী কার্য্যে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ করা হয়েছে। ক কিরূপে খ কে তার কার্য্যে বাঁধা প্রদান করেছিল চার্জে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
(উ) ক এর বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ সময়ে ও স্থানে খ কে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। ক কিরূপে খ কে হত্যা করেছিল চার্জে তার বিবরণ দেয়ার প্রয়োজন নেই।
(ঊ) ক এর বিরুদ্ধে খ কে শাস্তির হাত হতে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে আইনের নির্দেশ লংঘনের অভিযোগ করা হয়েছে। চার্জে অভিযোগকৃত নির্দেশ লংঘন এবং যে আইন লংঘন করা হয়েছে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
অভিযোগ গঠনে ভূল ভ্রান্তির ফলঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২২৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অভিযোগ নামায় অপরাধের বর্ণনা বা অপর কোনো তথ্য পরিবেশনের সময় কোনো ভূল হলে বা কোনো কিছু বাদ পড়লে তা যদি আসামীর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও ন্যায় বিচার ব্যাহত না করে তাহলে তা মামলার কোনো পর্যায়ে গুরুত্বর ভূল বলে গণ্য করা যাবে না।
উদাহারণঃ
(অ) ক এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ২৪২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে যে, সে জাল মুদ্রা দখলে রেখেছে এবং সে উহা যখন দখলে এনেছে তখন তা জাল বলে জানতো, কিন্তু প্রতারণা শব্দটি বাদ পড়েছে। এ বাদ যাওয়াতে বিভ্রান্ত হয়েছে বলে যদি প্রতীয়মান না হয় তাহলে উক্ত ভূলকে গুরুত্বর গণ্য করা হবে না।
(আ) ক এর বিরুদ্ধে খ কে প্রতারণার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং সে কিভাবে খ কে প্রতারণা করেছে তা বলা হয়নি অথবা ভূলভাবে বলা হয়েছে। ক মামলায় এর সমর্থনে সাক্ষ্য দেয় এবং লেনদেনে তার বিবরণ দেয়। আদালত ধরে নিতে পারে যে, অভিযোগে প্রতারণার প্রকৃতি বাদ পড়া গুরুত্বপূর্ণ নহে।
(ই) ক এর বিরুদ্ধে খ কে প্রতারণার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে কিন্তু অভিযোগে প্রতারণার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়নি। ক এবং খ এর মধ্যে বহু লেনদেন হয়েছে। কিন্তু ক জানতে পারল না যে কোন লেনদেন সম্পর্কে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং সে আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু বললো না। আদালত তা হতে ধরে নিতে পারেন যে, অভিযোগে প্রতারণার পদ্ধতি উল্লেখ না করা গুরুত্বপূর্ণ ভূল হয়েছে।
(ঈ) ক এর বিরুদ্ধে ১৮৮২ সালের ২১শে জানুয়ারী খোদা বখশ নামক এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে নিহত ব্যক্তির নাম হায়দার বখশ এবং হত্যার তারিখ ১৮৮২ সালের ২০শে জানুয়ারী। ক এর বিরুদ্ধে কেবল একটি হত্যাকান্ডের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক তদন্তকালে সে শুনেছে যে, তদন্তটি কেবল হায়দার বখশের হত্যা সম্পর্কিত। আদালত উহা ধরে নিবে যে ক বিভ্রান্ত হয়নি এবং অভিযোগের ভূল গুরুত্বপূর্ণ নয়।
(উ) ক এর বিরুদ্ধে ১৮৮২ সালের ২০শে জানুয়ারী হায়দার বখশকে এবং ১৮৮২ সালের ২১শে জানুয়ারী খোদা বখশকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। হায়দার বখশকে হত্যার জন্য খোদা বখশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছিল। হায়দার বখশকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে খোদা বখশকে হত্যার জন্য তার বিচার হলো। প্রকৃত পক্ষে যে সকল সাক্ষী উপস্থিত ছিলো তারা হায়দার বখশের হত্যাকান্ডের সাক্ষী। আদালত ইহা হতে ধরে নিতেই পারেন যে, ক বিভ্রান্ত হয়েছে এবং ভূলটি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে।
অভিযোগ পরিবর্তন বা সংযোজনঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২২৭ ধারায় বর্ণিত হয়েছে যে, রায় ঘোষণার পূর্বে যে কোনো সময় যে কোনো আদালত অভিযোগ পরিবর্তন বা নতুন অভিযোগ গঠন করতে পারেন। তবে এ ধরণের প্রত্যেকটি পরিবর্তন বা সংযোজন আসামীকে পড়ে শুনাতে ও বুঝাতে হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২২৭ ধারা অনুসারে প্রণীত বা পরিবর্তিত বা সংযোজিত অভিযোগ যদি এরূপ হয় যে, আদলতের অভিমতে অবিলম্বে বিচার শুরু করতে আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থন বা সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনায় ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা নেই তাহলে আদালত ইচ্ছা করলে অভিযোগ প্রণয়ন, পরিবর্তন বা সংযোজনের পর নতুন বা পরিবর্তিত অভিযোগ মূল অভিযোগ হিসেবে গণ্য করে বিচার শুরু করতে পারেন (ফৌজদারী কার্যবিধি ২২৮ ধারা)।
যদি নতুন পরিবর্তিত বা সংযোজিত অভিযোগ এরূপ হয় যে, আদালতের মতে অবিলম্বে বিচার শুরু করতে আসামী বা সরকার পক্ষের ক্ষতি হতে পারে, তাহলে আদালত নতুন বিচারের নির্দেশ দিতে পারেন অথবা প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য বিচার মূলতবী করার নির্দেশ দিতে পারেন (ফৌজদারী কার্যবিধি ২২৯ ধারা)।
নতুন পরিবর্তিত বা সংযোজিত অভিযোগে বর্ণিত অপরাধ যদি এরূপ হয় যে, মামলা চালানোর জন্য সরকার হতে পূর্ব অনুমতি প্রয়োজন, তাহলে উক্ত অনুমতি গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত উহা চালানো যাবে না। তবে নতুন বা পরিবর্তিত অভিযোগের ভিত্তি যে ঘটনার উপর প্রতিষ্ঠিত, সে ঘটনার ভিত্তিতে মামলা চালানোর পূর্ব অনুমতি গ্রহণ করা হয়ে থাকলে পুনরায় অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই (ফৌজদারী কার্যবিধি ২৩০ ধারা)।
বিচার শুরু হওয়ার পর আদালত অভিযোগ পরিবর্তন বা নতুন সংযোজন করলে সরকার পক্ষে ইতিপূর্বে যে সকল সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে, তাদেরকে ডেকে উক্ত পরিবর্তন বা সংযোজন সম্পর্কে জবানবন্দী পেশ করতে দিতে হবে এবং আদালত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলে অতিরিক্ত কোনো সাক্ষী তলবের অনুমতি দিবেন (ফৌজদারী কার্যবিধি ২৩১ ধারা)।
কি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে সম্পর্কে যেক্ষেত্রে সন্দেহ বিদ্যমানঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি একটি মাত্র কার্য অথবা ধারাবাহিক কতিপয় কার্য এরূপ প্রকৃতির হয় যে, যে সকল তথ্য প্রমাণ করা যায় তার ভিত্তিতে কতিপয় অপরাধের মধ্যে কোনটি সংঘটিত হয় সে সম্পর্কে সন্দেহ থাকে, তাহলে আসামীর বিরুদ্ধে এরূপ সকল অথবা কোনো একটির জন্য বিকল্পভাবে অভিযোগ গঠন করা যেতে পারে।
‘ক’ এমন একটি কাজের জন্য অভিযুক্ত হয়েছে যা চুরি অথবা চোরাইমাল গ্রহণ অথবা অপরাধজনক বিশ্বাসভংগ অথবা প্রতারণা হতে পারে। তার বিরুদ্ধে চুরি, চোরাইমাল গ্রহণ, অপরাধজনক বিশ্বাসভংগ ও প্রতারণার জন্য অভিযোগ গঠন করা যেতে পারে।
এক অপরাধে অভিযোগ গঠন পূর্বক অন্য অপরাধে দন্ড প্রদানঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৭ ধারার বলা হয়েছে যে, ফৌজদারী কার্যবিধি ২৩৬ ধারায় উল্লিখিত ক্ষেত্রে আসামীর বিরুদ্ধে যে অপরাধের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়, সাক্ষ্য প্রমাণে যদি দেখা যায় যে, সে ভিন্ন অপরাধ করেছে এবং এই ভিন্ন অপরাধের জন্য তাকে উক্ত ধারা অনুসারে অভিযোগ করা যেতো তাহলে যে অপরাধ সে করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে তজ্জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করা হলেও সেজন্য তাকে দন্ডিত করা যাবে।
চুরির অপরাধে ‘ক’ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায় যে, সে অপরাধজনক বিশ্বাসভংগ করেছে বা চোরাইমাল গ্রহণ করেছে। উক্ত অপরাধে অভিযোগ গঠন করা না হয়ে থাকলে অপরাধজনক বিশ্বাসভংগ বা চোরাইমাল গ্রহণের দায়ে তাকে দন্ডিত করা যাবে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৮ (২) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং প্রমাণিত তথ্যাবলী উহাকে হ্রাস করে লঘুতর অপরাধে পরিণত করে, তখন অভিযোগ গঠন না হয়ে থাকলেও তাকে উক্ত লঘুতর অপরাধের জন্য দন্ডিত করা যাবে।
দন্ডবিধির ৩২৫ ধারায় ‘ক’ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায় যে, ‘ক’ দন্ডবিধির ৩২৩ ধারায় অপরাধ করেছে। এক্ষেত্রে দন্ডবিধির ৩২৩ ধারায় অভিযোগ গঠন না হয়ে থাকলেও ‘ক’ কে দন্ডবিধির ৩২৫ ধারার পরিবর্তে দন্ডবিধির ৩২৩ ধারায় শাস্তি দেয়া যাবে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৮ (২ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়, তখন তাকে অপরাধ করার প্রচেষ্টার জন্যও দন্ডিত করা যাবে, যদিও উক্ত প্রচেষ্টার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি। যেমন পকেট মারার অভিযোগে ‘ক’ এর বিরুদ্ধে ৩৭৯ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হলো কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেলো যে, ‘ক’ পকেট মারতে পারেনি। কিন্তু পকেট মারার জন্য পকেটে হাত দিয়েছিল। এক্ষেত্রে ‘ক’ এর বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন ব্যতীত পকেট মারার চেষ্টা করার জন্য দন্ডবিধির ৩৭৯/৫১১ ধারায় শাস্তি প্রদান করা যাবে।
উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ
(১) মামলার ঘটনা ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দন্ডবিধি ৩০২ ধারা হতে দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় চার্জ পরিবর্তন করা যায় (৪১ ক্রাউন ৩৭৩)।
(২) আপীলকারী আসামীদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অধীন চার্জ গঠিত হয় কিন্তু সাক্ষ্য বিবেচনা করে অতিরিক্ত দায়রা জজ তাদেরকে দন্ডবিধির ২০১ ধারায় দোষী হিসেবে দেখতে পান। বিষয়টি হাইকোর্ট বিভাগে চ্যালেঞ্জ করা হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৬ ও ২৩৭ ধারা উল্লেখ করে হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত দন্ডাজ্ঞ সমর্থন করেন। হাইকোর্ট বিভাগের অভিমতে বে-আইনী কিছু নেই (১৯৮১ বিসিআর ১২৯ এসসি)।
(৩) প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র অপরাধের জন্য পৃথক চার্জ হবে। এ বিধান বাধ্যতামূলক (২৩ ডিএলআর ৩২)।
(৪) যদি ঘটনা হতে দেখা যায় যে, আসামী কোন অপরাধ করেছে তা বুঝা যাচ্ছে না তাহলে সমস্ত অপরাধের জন্য অথবা একটা অপরাধের জন্য চার্জ গঠন করা যায়। বিচার শেষে যে কোনো অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া যায়, এমনকি অন্য অপরাধের জন্য চার্জ গঠিত না হলেও শাস্তি দেয়া যায় (৪২ ডিএলআর ২২ এডি)।
(৫) চার্জে কোনো শব্দ বাদ পড়ায় যদি আসামীর ক্ষতি হয় তাহলে উহা ফৌজদারী কার্যবিধির ২২৫ এবং ৫৩৭ ধারায় ত্রুটিযুক্তযোগ্য (১১ ডিএলআর ৮৮৪ এসসি)।
(৬) চার্জ পরিবর্তন বা যুক্ত করণের ব্যপক বিবেচনামূলক ক্ষমতা আদালতের আছে। নালিশে এমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও তদন্ত রিপোর্ট বা সাক্ষ্যে যদি প্রকাশ পায় এবং আদালত ন্যায়সংগত মনে করলে বিচারের যে কোনো পর্যায়ে যথাযথ চার্জ গঠন করতে পারেন বা চার্জ পরিবর্তন করতে পারেন (৩৭ ডিএলআর ৩০০)।
(৭) মূল অপরাধের জন্য যার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সহায়তার চার্জ গঠন না করা হলেও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সহায়তার জন্য দন্ডিত করা যায় (১৪ ডিএলআর ৭০)।
(খ) সাক্ষ্য গ্রহণঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১ (ক) ধারা অনুযায়ী উভয় পক্ষকে শুনে এবং নথিপত্র পর্যালোচনা করে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪২ ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার পর সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৪ ধারায় সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেট প্রথমে ফরিয়াদীর বক্তব্য শ্রবণ করবেন এবং তারপর বাদী পক্ষের সমর্থনে প্রদত্ত সমস্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। ম্যাজিষ্ট্রেট যদি উপযুক্ত মনে করেন তাহলে ফরিয়াদী বা আসামীর আবেদনক্রমে কোনো সাক্ষীর প্রতি হাজির হওয়া বা কোনো দলিল বা বস্তু হাজির করার নির্দেশ দিয়ে সমন প্রদান করতে পারেন। এরূপ আবেদনক্রমে কোনো সাক্ষীর প্রতি সমন দেয়ার পূর্বে ম্যজিষ্ট্রেট নির্দেশ দিতে পারেন যে, বিচারে হাজির হবার জন্য তার যুক্তিসংগত খরচ আদালতে জমা দিতে হবে। কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার পর তার স্বাক্ষর গ্রহণের পূর্বে তাকে পড়ে শুনাতে হবে। যদি পড়ে শুনানো না হয় তাহলে উহা অনিয়মতান্ত্রিক বা ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৩৭ ধারায় ত্রুটিযুক্তযোগ্য (৭ ডিএলডি ৮০)।
মামলা প্রমাণের দায়িত্ব (Burden of proof) তার উপরই বর্তায় যিনি মামলার কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায়ন করেন। সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে মামলা প্রমাণের দায়িত্ব সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনের ১০১-১১৪ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ১৩৫-১৬৬ ধারায় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
সাক্ষী উপস্থিত করার ক্রমঃ
সাক্ষ্য আইনের ১৩৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ক্রমানুসারে সাক্ষী উপস্থিত করা ও তাদের জেরা জবানবন্দী গ্রহণ করা হবে তা দেওয়ানী ও ফৌজদারী কার্যবিধি সম্পর্কিত প্রচলিত আইন ও রীতি অনুসারে নির্ধারিত হবে। উক্তরূপ কোনো আইন না থাকলে আদালত কর্তৃক তা নির্ধারিত হবে।
জবানবন্দী, জেরা ও পুনঃ জবানবন্দীঃ
সাক্ষ্য আইনের ১৩৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে পক্ষ সাক্ষীকে হাজির করেছেন সে পক্ষ যখন সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন তখন তাকে সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ বলা হয়। বিরুদ্ধ পক্ষ যখন সেই সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন তখন তাকে জেরা বলা হয়। জেরার পর সাক্ষী উপস্থিতকারী পক্ষ যদি পুনরায় তাকে প্রশ্ন করেন, তবে তাকে পুনঃ জবানবন্দী গ্রহণ করা বলা হয়।
সাক্ষ্য ও পুনঃ জবানবন্দী গ্রহণের ক্রমঃ
সাক্ষ্য আইনের ১৩৮ ধারা অনুসারে প্রথমে সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হবে। তারপর বিরুদ্ধ পক্ষ ইচ্ছা করলে সাক্ষীকে জেরা করবেন এবং জেরার পর সাক্ষী উপস্থিতকারী পক্ষ ইচ্ছা করলে পুনঃ জবানবন্দী গ্রহণ করবেন। সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ ও জেরা প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে হতে হবে। কিন্তু সাক্ষী তার জবানবন্দীতে যে সকল বিষয় সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন কেবলমাত্র সেই সকল বিষয়ের মধ্যেই জেরা সীমাবদ্ধ থাকবে না।
সাক্ষীকে বিচারক কর্তৃক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার ক্ষমতাঃ
বিচারক প্রাসঙ্গিক ঘটনা উদ্ধার করার জন্য অথবা তৎসম্পর্কে উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহের জন্য যে কোনো সাক্ষীকে যে কোনো সময় যে কোনো আকারে যে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারবেন অথবা প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসংগিক ঘটনা সম্পর্কে পক্ষগণকে যে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারবেন এবং যে কোনো দলিল বা বস্তু দাখিল করার আদেশ দিতে পারবেন। পক্ষগণ বা তাদের প্রতিনিধিগণ অনুরূপ কোনো প্রশ্ন বা আদেশ সম্পর্কে কোনো আপত্তি করতে পারবেন না। অনুরূপ কোনো প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী যা বলবে তৎসম্পর্কে আদালতের অনুমতি ব্যতীত সাক্ষীকে কোনো জেরাও করতে পারবেন না (সাক্ষ্য আইনের ১৬৫ ধারা)।
অত্যাবশ্যকীয় সাক্ষীকে হাজির হওয়ার আহবানঃ
বিচার বা অন্য কোনো কার্যক্রমের যে কোনো পর্যায়ে কোনো আদালত যে কোনো ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে সমন দ্বারা আহবান করতে পারবেন বা সাক্ষী হিসেবে সমন দ্বারা আহবান করা না হলেও উপস্থিত যে কোনো ব্যক্তির জবানবন্দী গ্রহণ করতে পারবেন বা পূর্বে যার জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে তাকে পুনরায় তলব করে পুনরায় তার জবানবন্দী গ্রহণ করতে পারবেন (ফৌজদারী কার্যবিধি ৫৪০ ধারা)।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৫৩-৩৬৩ ধারায় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে।
আসামীর উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণঃ
সমস্ত সাক্ষ্য আসামীর উপস্থিতিতে অথবা তার ব্যক্তিগত উপস্থিতি যখন প্রয়োজন না হয় অর্থাৎ ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৫ ধারা মোতাবেক উকিল এজেন্ট থাকেন তখন তার উকিলের উপস্থিতিতে গ্রহণ করতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৫৩ ধারা)।
সাক্ষ্য সমাপ্তির পরবর্তী কার্যক্রমঃ
প্রত্যেক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার সংগে সংগে আসামী হাজির থাকলে তার উপস্থিতিতে অথবা সে উকিলের মাধ্যমে হাজির হলে উকিলের উপস্থিতিতে উক্ত সাক্ষ্য সাক্ষীকে পড়ে শুনাতে হবে এবং প্রয়োজন হলে উহা সংশোধন করতে হবে। সাক্ষীকে তার সাক্ষ্য পড়ে শুনানোর সময় সে যদি উহার কোনো অংশের নির্ভুলতা অস্বীকার করে তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট বা দায়রা জজ সাক্ষ্য সংশোধন না করে উক্ত স্থানে সাক্ষীর আপত্তির স্মারক লিপিবদ্ধ করতে পারবেন এবং তিনি যেরূপ প্রয়োজন বলে মনে করেন সেরূপ মন্তব্য যোগ করবেন। সাক্ষী যে ভাষায় সাক্ষ্য প্রদান করছেন তা ভিন্ন অপর কোনো ভাষায় উহা লিপিবদ্ধ হয়ে থাকলে এবং যে ভাষায় সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্দ হয়েছে তা বুঝতে না পারলে যে ভাষায় সাক্ষ্য প্রদত্ত হয়েছে সে ভাষায় অথবা যে ভাষা সে বুঝতে পারে সে ভাষায় তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬০ ধারা)।
সাক্ষীর আচরণ সম্পর্কে মন্তব্যঃ
বিচারক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর তিনি যদি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তাহলে সাক্ষীর হাবভাব সম্পর্কে মন্তব্য লিপিবদ্ধ করবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৩ ধারা)।
উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ
(১) যদি বিশ্বাসযোগ্য হয় তাহলে একজনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে শাস্তি প্রদান করা যায় (২৯ ডিএলআর ২১১ এসসি)।
(২) বাদী পক্ষের সাক্ষীর সাক্ষ্য আসামী দেখতে পারবে এবং এর নকল এবং প্রতিবেদনের নকল নিতে পারবে (১৯৪১ র্যাং ৫৯০)।
(৩) ম্যাজিষ্ট্রেটকে পাওয়া না গেলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার অধীন দোষ স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধকারী ম্যাজিষ্ট্রেটকে আদালতে পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই (৩৭ ডিএলআর ১)
(৪) ময়না তদন্তকারী ডাক্তারকে পরীক্ষা না করা বাদী পক্ষের মামলার জন্য ক্ষতিকর না হলে একমাত্র সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে দন্ডাজ্ঞা প্রদান করা যায় যদি সাক্ষ্য সন্দেহযুক্ত না হয় (৪০ ডিএলআর ১৭৭)।
(৫) মামলার বিচার ক্ষমতা নেই এরূপ মামলায় সহকারী দায়রা জজ আংশিক সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। এরূপ রেকর্ড করণ বে-আইনী। সুতরাং পুনঃ বিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে প্রেরণ করা হলো (৪২ ডিএলআর ৪২৮)।
(৬) ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামী কর্তৃক কোনো সাক্ষীকে অতিরিক্ত জেরার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করে পুনঃ সমন দিয়ে পুনঃ তলব করতে পারেন। তবে আসামী অধিকার হিসাবে ইহা দাবী করতে পারে না (৩ বিএলডি ১৮৭)।
(৭) তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পরীক্ষা না করার ব্যর্থতা মারাত্মক ত্রুটি যা ভালো করা যায় না (৯ ডিএলআর ৫৯৪)।
(৮) অভিযোগপত্র দাখিলকারী অফিসার সমন পাবার পরও যদি আদালতে হাজির না হয় তাহলে হাজিরা কার্যকর করার জন্য গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করতে হবে (৩৪ ডিএলআর ৭৩)।
(৯) তদন্তকারী অফিসারকে হাজির করানোর জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তদন্তকারী অফিসারের হাজিরা নিশ্চিত করণের জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পুলিশ হেড কোয়াটার্স এবং সরকারকে অবহিত করতে বিচারকারী আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ পদক্ষেপগুলো শেষ করার পর বিচারকারী আদালত আইন অনুসারে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন (৩৩ ডিএলআর ৭৯)।
(১০) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা অনুসারে লিপিবদ্ধকৃত বিবৃতি কোনো সাক্ষই নহে (২২ ডিএলআর)।
(গ) আসামী পরীক্ষাঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামীকে পরীক্ষা করা হয়। বাদী পক্ষের সাক্ষ্য পর্ব শেষে আসামীকে বাদী পক্ষের সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করা হয়।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারার বিধান নিম্নরূপঃ
(১) আসামীকে তার বিরুদ্ধে প্রদত্ত সাক্ষ্য হতে উদ্ভুত কোনো পরিস্থিতি ব্যাখ্যার সুযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যে আদালত তদন্ত বা বিচারের যে কোনো পর্যায়ে আসামীকে যে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারবেন এবং উপরিউক্ত উদ্দেশ্যে বাদী পক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী হওয়ার পরও তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের আহবান জানানোর পূর্বে মামলা সম্পর্কে সাধারণভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন।
(২) এরূপ কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করলে বা মিথ্যা জবাব দিলে আসামী দন্ডনীয় হবে না তবে আদালত এরূপ অস্বীকৃতি বা মিথ্যা জবাব হতে ন্যায়সংগত অনুমান করতে পারবেন।
(৩) আসামী কর্তৃক প্রদত্ত জবাব এরূপ তদন্ত বা বিচারে বিবেচনা করা যেতে পারে এবং উক্ত জবাবে সে অপর কোনো অপরাধ করেছে বলে আভাস পাওয়া গেলে অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচারে উক্ত জবাব তার পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্য হিসেবে পেশ করা যাবে।
(৪) আসামীকে কোনো প্রকার শপথ গ্রহণ করানো যাবে না।
উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ
(১) যখন কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট কোনো আসামীকে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৫ (১) ধারায় অথবা ৫৪০ (১) ধারায় কৌশলীর মাধ্যমে আদালতে হাজির হওয়ার অনুমতি প্রদান করেন, তখন ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার জন্য উক্ত আসামীকে আদালতে হাজির হতে বাধ্য নাও করতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে আসামীর পক্ষে কৌশলীকে পরীক্ষা করতে পারবেন (৭ ডিএলআর ৩৫৭ ডিবি)।
(২) একাধিক আসামী থাকলে ম্যজিষ্ট্রেট প্রত্যেক আসামীকে পৃথকভাবে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করবেন। কেবল একটি ফরমে সকল আসামীর যৌথ বিবৃতি লিপিবদ্ধ করণ অত্র ধারা অনুমোদন করে না। অনুরূপভাবে একজন আসামীর বিবৃতির কার্বন কপি অন্যান্য আসামীদের বিবৃতি হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এরূপ সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি গ্রহণ আইনের লংঘন বৈ আর কিছু নয়। এ ধরণের রীতি শুধু অনচিতই নয়, বে-আইনীও বটে এবং ইহা কোনোভাবে অনুমোদন করা যায় না (২১ ডিএলআর ৫৪৯)।
(৩) ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারার বিধান মতে পরীক্ষা করার সময় দোষ স্বীকারোক্তির প্রতি আসামীর দৃষ্টি আকর্ষণ না করা হলে তার বিরুদ্ধে উহা ব্যবহার করা যায় না (৪১ ডিএলআর ৬৬)।
(৪) ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারার বিধান অনুসারে প্রদত্ত বিবৃতি লিপিবদ্ধ করা না হলে বিবেচনা করা হবে যে, উহা আসামীকে ক্ষতি করেছে। সুতরাং ৩৪২ ধারার অধীন আসামীকে পরীক্ষার স্তর হতে পুনঃরায় বিচার প্রয়োজন (৩ ডিএলআর ১৯১)।
(৫) ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীন আসামীকে পরীক্ষা করতে হবে যে, সে কোনো সাক্ষ্য উপস্থাপন করবে কিনা (২০ ডিএলআর ৩৪৪)।
(৬) আসামীকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করণের সময় ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৪ ধারায় বর্ণিত পদ্ধতিতে আসামীর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করতে হবে।
আসামীর জবানবন্দী যেভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবেঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৪ ধারায় আসামীর জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে।
(১) যখন কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট বা হাইকোর্ট বিভাগ ব্যতীত অপর কোনো আদালত কোনো আসামীর জবানবন্দী গ্রহণ করবেন, তখন তাকে জিজ্ঞাসিত প্রত্যেকটি প্রশ্ন ও তার প্রদত্ত প্রত্যেকটি জবাবসহ সমস্ত জবানবন্দী যে ভাষায় তার জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে সে ভাষায় অথবা সম্ভব না হলে আদালতের ভাষায় বা ইংরেজী ভাষায় পূর্ণাংগভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং পড়ে শুনায়ে ও বুঝিয়ে দিতে হবে এবং সে তার জবাবে নতুন কিছু যোগ করতে পারবে।
(২) আসামী যখন সমগ্র জবানবন্দী সঠিক বলে স্বীকার করে তখন আসামী এবং আদালতের বিচারক উহাতে স্বাক্ষর করবেন এবং উক্ত বিচারক স্বাক্ষরিত প্রত্যায়ণপত্র প্রদান করবেন যে, জবানবন্দী তার উপস্থিতিতে ও শ্রুতিগোচরে গ্রহণ করা হয়েছে এবং নথিতে আসামীর বিবৃতির একটি পূর্ণাংগ ও সত্য বিবরণ রয়েছে।
(৩) বিচারক নিজে আসামীর জবানবন্দী লিপিবদ্ধ না করলে জবানবন্দী চলার সময় তিনি আদালতের ভাষায় বা ইংরেজী ভাষায় উহার একটি স্মারকলিপি প্রস্তুত করতে থাকবেন এবং এ বিবরণ বিচারক কর্তৃক নিজ হাতে লিপিবদ্ধ ও স্বাক্ষরিত হতে হবে এবং নথির সাথে তা সংযুক্ত করতে হবে। বিচারক উক্তরূপ স্মারক প্রস্তুত করতে না পারলে তিনি তার এ অসমর্থের কারণ লিপিবদ্ধ করবেন।
(৪) এ ধারার কোনো বিধান ২৬৩ ধারা অনুযায়ী আসামীর জবানবন্দী গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে ধরে নেয়া হবে না।
(ঘ) সাফাই সাক্ষী (Defence witness):
আসামী কোনো কোনো সময় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আদালতে সাক্ষী উপস্থিত করেন, এ সাক্ষীই সাফাই সাক্ষী নামে অভিহিত। আসামীকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করার সময় সে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনো সাফাই সাক্ষী আদালতে উপস্থিত করবে কিনা এ মর্মে প্রশ্ন করা হয়। আসামী কর্তৃক আদালতে সাফাই সাক্ষী উপস্থিত করানো বাধ্যতামূলক নয়। ইহা তার ইচ্ছাধীন ব্যাপার। সাফাই সাক্ষী আদালতে হাজির না করতে পারলে সে আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যর্থ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে না। আসামী নিজেও সাফাই সাক্ষী হতে পারবে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪০ (৩) ধারায় বলা হয়েছে যে, অপরাধের দায়ে ফৌজদারী আদালতে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি আসামী পক্ষে সাক্ষী হওয়ার যোগ্য হবে এবং তার বিরুদ্ধে বা তার সাথে একই বিচারে অভিযুক্ত অপর কোনো আসামীর বিরুদ্ধে প্রণীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য শপথ গ্রহণ পূর্বক সাক্ষ্য প্রদান করতে পারবে, তবে শর্ত থাকে যে-
(ক) এরূপ ব্যক্তি লিখিতভাবে অনুরোধ না করলে তাকে সাক্ষী হিসেবে ডাকা যাবে না, অথবা
(খ) সে সাক্ষী দিতে ব্যর্থ হলে বিচারের কোনো পক্ষ বা আদালত সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবে না অথবা ইহা দ্বারা তার বিরুদ্ধে বা তার সাথে একই বিচারে অভিযুক্ত অপর কোনো আসামীর বিরুদ্ধে কোনো অনুমানের উদ্ভব হবে না।
(ঙ) যুক্তিতর্ক (Arguments):
আদালত সাফাই সাক্ষী শেষে এবং রায় ঘোষণার পূর্বে মামলার সাথে জড়িত পক্ষদয়ের যুক্তিতর্ক শ্রবণ করে থাকেন। আসামী পক্ষ সাফাই সাক্ষী উপস্থিত না করলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার পর এবং রায়ের পূর্বে যুক্তিতর্ক শুনতে হয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫-ঞ ধারায় দায়রা আদালত কর্তৃক যুক্তিতর্ক শ্রবণের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে যে, আসামী পক্ষের সাক্ষীদের (যদি থাকে) জবানবন্দী গৃহীত হবার পর সরকারী কৌশলী তার বক্তব্যের সার সংক্ষেপ পেশ করবেন এবং আসামী বা তার কৌশলী উহার উত্তরদানের অধিকারী হবেন। কিন্তু ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে যুক্তিতর্ক শ্রবণের ব্যাপারে ফৌজদারী কার্যবিধির কোনো ধারায় কোনো কিছু বর্ণিত হয়নি। তবে দায়রা আদালতের ন্যায় ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫-ঞ ধারা অনুসরণ করে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে যুক্তিতর্ক শ্রবণ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪০ (১) ধারায় বর্ণিত হয়েছে যে, ফৌজদারী আদালতে অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির অথবা আদালতে এ আইন অনুসারে যার বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তার কৌশলীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থন করার অধিকার থাকবে। এ ধারার ব্যাখ্যা করে এ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় যে, বাদীপক্ষ তার মামলা প্রমাণের জন্য সাক্ষী প্রমাণ উপস্থিত করলে বিবাদী পক্ষের তা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে খন্ডনের সুযোগ রয়েছে। যুক্তিতর্কে উভয় পক্ষ অংশ গ্রহণ করবে।
যুক্তিতর্ক সম্পর্কিত উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ
(১) একথা বলা ঠিক নয় যে, ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক যুক্তিতর্ক শ্রবণ মামলার শুনানীর অংশে পড়ে না। যেহেতু ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বিচার্য মামলার ক্ষেত্রে যুক্তিতর্ক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি এবং কেবল সুনির্দিষ্টভাবে দায়রা আদালত এবং হাইকোর্ট কর্তৃক যুক্তিতর্ক শ্রবণের কথা ফৌজদারী কার্যবিধিতে বিধৃত হয়েছে। দায়রা আদালতে বিচারের সময় সরকারী কৌশলীএবং আসামী বা তার প্রতিনিধি বক্তব্য প্রদান করতে পারবে, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, আসামী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে তার বক্তব্য পেশ করার সহজাত অধিকার হতে বঞ্চিত হবে (এআরআর ১৯৪৪ লাহোর ১০(১১)।
(২) প্রত্যেক ফৌজদারী মামলার বিচারে আদালত যুক্তিতর্ক শুনতে বাধ্য, যদি তা উপস্থাপন করা হয় (২৫ সিআরএলজে ১৩৮০)।
(চ) রায় (Judgement):
কোনো মামলার সর্বশেষ স্তর হচ্ছে রায়। যুক্তিতর্কের পরে রায় ঘোষণা করা হয়। সাক্ষ্য এবং যুক্তিতর্ক বিবেচনা করে বিচারকগণ যে অভিমত বা সিদ্ধান্তে পৌছেন তাই রায়।
রায় ঘোষণার পদ্ধতিঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৬ ধারায় রায় ঘোষণার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। ফৌজদারী আদালতের প্রত্যেকটি বিচারের রায় ঘোষণা করতে হবে অথবা রায়ের সারাংশ ব্যাখ্যা করতে হবে। পক্ষ সমূহের বা তাদের কৌশলীকে অবহিত করে বিচার সমাপ্ত হওয়ার অব্যাবহিত পরই অথবা পূর্ববর্তী কোনো সময়ে প্রকাশ্য আদালতে, আদালতের ভাষায় অথবা আসামী বা তাদের কৌশলীর বোধগম্য কোনো ভাষায় ঘোষণা করতে হবে। কোনো পক্ষ অনুরোধ করলে হাকিম সমগ্র রায় পড়ে শুনাবেন। আসামী হাজতে থাকলে রায় শ্রবনের জন্য তাকে আদালতে আনতে হবে অথবা হাজতে না থাকলে তাকে হাজির থাকার নির্দেশ দিতে হবে। তবে বিচারের সময় ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৫ ধারায় তাকে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হতে রেহাই দেয়া হলে এবং তাকে কেবল জরিমানা করা হলে বা খালাস দেয়া হলে তার কৌশলীদের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করা যাবে।
রায়ের বিষয়বস্তুঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৭ ধারায় রায়ের ভাষা এবং রায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেকটি রায় আদালতের হাকিম কর্তৃক বা তাদের শ্রুতিলিখন হতে আদালতের ভাষায় বা ইংরেজী ভাষায় লিখতে হবে এবং উহাতে বিচার্য বিষয়সমূহ, সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তের কারণ সমূহ উল্লেখ করতে হবে। হাকিম রায় নিজ হাতে না লিখলে রায়ের প্রত্যেকটি পৃষ্ঠায় অবশ্যই তিনি স্বাক্ষর করবেন।
আসামী যে অপরাধে ও দন্ডবিধি বা অন্য কোনো আইনের যে ধারায় দন্ডিত হলো এবং দন্ডের পরিমাণ রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
দন্ডবিধি অনুসারে দন্ড প্রদান করা হলে অপরাধটি উক্ত বিধির দুইটি ধারার মধ্যে কোন ধারার অন্তর্ভুক্ত অথবা একই ধারার দুইটি অংশের মধ্যে কোন অংশের অন্তর্ভুক্ত সে সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে আদালত স্পষ্টরূপে তা প্রকাশ করে বিকল্প রায় প্রদান করবেন।
আসামী খালাস দেয়া হলে যে অপরাধ হতে আসামীকে খালাস দেয়া হল রায়ে তা উল্লেখ করতে হবে এবং তাকে মুক্তি দেয়া হউক মর্মে নির্দেশ দিতে হবে।
আসামী যদি মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় কোনো অপরাধে দন্ডিত হয় অথবা তৎপরিবর্তে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা কয়েক বৎসর মেয়াদের কারাদন্ড দেয়া হয় তাহলে আদালত রায়ে উক্ত দন্ডদানের কারণ উল্লেখ করবেন।
রায় পরিবর্তন করা যাবে নাঃ
কোনো আদালত রায়ে স্বাক্ষর করার পর করণীক ভূল ব্যতীত উহা পরিবর্তন বা পূনর্বিবেচনা করতে পারবেন না (ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৯ ধারা)।
পূর্ণাংগ রায়ের উপাদান সমূহঃ
একটি পূর্ণাংগ রায় লেখার সময় নিম্নে বর্ণিত ছয়টি বিষয়ের উপর বর্ণনা থাকতে হবে।
(১) সংক্ষেপে বাদী পক্ষের মামলার বিবরণ,
(২) আসামী পক্ষের মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ,
(৩) বিচার্য বিষয় সমূহ,
(৪) সংক্ষেপে সাক্ষ্য পর্ব আলোচনা,
(৫) সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তের কারণ সমুহ,
(৬) আদেশ।
আদেশ লেখার পর অবশ্যই তারিখ সহ বিচারক তাতে স্বাক্ষর করবেন।
রায় সম্পর্কে উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত সমূহঃ
(১) মামলার শুনানী শেষ হবার পর রায় ঘোষণায় অযৌক্তিক বিলম্ব হওয়া উচিৎ নয়। বিলম্বে রায় প্রদান আইনের নীতির পরিপন্থি (৫ সিপিএলআর (সিআর) ২৪)।
(২) যেক্ষেত্রে কোনো মামলায় একাধিক আসামী থাকে সেক্ষেত্রে রায়ে প্রত্যেক আসামীর বিরুদ্ধে প্রদত্ত সাক্ষ্য পৃথক পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা উচিৎ (১৯৫২ সিআরএলজে)।
(৩) অগোছালোভাবে কোনো রায় লেখা উচিৎ নয়। যে রায়ে সাক্ষ্য সমর্থিত হওয়ার পরিস্থিতি আলোচনা করা হয় না এবং সাক্ষীর সাক্ষ্য ও সমর্থনযোগ্য অবস্থা প্রত্যাখ্যান করার সপক্ষে কোনো অকাট্য যুক্তি প্রদর্শিত হয় না, তাকে যথাযথ রায় বলা যাবে না (পিএলডি ১৯৬৬ এসসি ৭১)।
(৪) রায় অবশ্যই প্রকাশ্য আদালতে ঘোষণা করতে হবে। যদি কোনো বিচারক রায় লেখার পর আদালতে ঘোষণা করার পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন তাহলে সে রায়কে রায় বলে ধরা যাবে না। তা হবে কেবল অভিমত (৭৩ ডব্লিউ আর ২০৯)।
(৫) রায় বিচার কার্যক্রম শেষে লিখতে হবে এবং আদালতে ঘোষণা করতে হবে। রায় না লিখে চুড়ান্ত আদেশ আদালতে ঘোষণা করলে এরূপ ভূল হবে যা ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৩৭ ধারা অনুসারে সংশোধনীয় (১৩ বোম্বে এলআর ৬৩৫)।
(৬) রায়ে সাক্ষ্যের আলোচনা না থাকলে উহা সমর্থন করা যায় না (৭ ডিএলআর ৮১)।
(৭) রায়ে বিচার্য বিষয়সমূহ, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তের কারণ সমূহ অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে (পিএলডি ১৯৫৮ পেশোয়ার ৩১)।
(৮) ম্যাজিষ্ট্রেটকে রায়ে পূর্ণ নাম স্বাক্ষর করতে হবে। কেবল অনুস্বাক্ষর রায়কে ত্রুটিযুক্ত করে (৩২ সিআরএলজে ৪৩০)।
(৯) শাস্তি একত্রে চলবে নাকি একটা শেষ হলে অন্যটি চলবে তা আদালত অবশ্যই রায়ের আদেশে উল্লেখ করবেন (২১ সিডব্লিউএন ৬০৮)।
(১০) ফৌজদারী মামলায় ঘোষিত পূনর্বিবেচনার আবেদন ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৯ ধারার পরিপন্থি (৪৫ ডিএলআর ৩৯৪)।
(১১) রায়ে ম্যাজিষ্ট্রেটের পূর্ণ নাম স্বাক্ষর করতে হবে (৩২ সিআরএলজে ৪৩০)।
(১২) সাক্ষ্য গৃহীত হয়নি এরূপ দলিলের উপর ভিত্তি করে রায় প্রদান করা হলে তা সমর্থন করা যায় না (এআইআর ১৯৬৩ এসসি ৩৪০)।
(১৩) ফৌজদারী মামলায় যখন উভয় পক্ষ সাক্ষ্য প্রদান করে তখন উভয়ের সাক্ষ্য প্রমাণ পাশাপাশি রেখে দেখতে হবে যে, বাদীপক্ষ আসামীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন কিনা বা বিবাদীপক্ষ তাদের সাক্ষ্য দ্বারা বাদীর মামলা মিথ্যা বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে কিনা বা আসামীপক্ষ তাদের সাক্ষ্য ব্যতীত বাদীর মামলা সম্পর্কে যুক্তিযুক্তভাবে সন্দেহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে কিনা। উভয়পক্ষের সাক্ষ্য প্রমাণ অসংলগ্নভাবে আলোচনা করলে উহা অনুমোদন করা যায় না (১৪ ডিএলআর ৫৯)।
(১৪) পৃথক তিনটি তারিখে তিনটি চুরি সংঘটিত হয়। কিন্তু আসামীর নিকট হতে চোরাই মালগুলো একই সময়ে উদ্ধার হয়। আসামী পৃথক তিনটি তারিখে মালগুলো গ্রহণ করে ইহা প্রমানিত না হলে পৃথক তিনটি শাস্তি প্রদান করা যায় না (৭ ডিএলআর ১৮৪)।
(১৫) অসম্পূর্ণ সাক্ষ্যের জন্য আসামী খালাস পেলেও তার আবেদনের ভিত্তিতে চোরাইমাল তাকে দেয়া যায় না (৪০ ডিএলআর ২৮০)।